আজ শনিবার, ১৫ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আজ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস

আজ শহীদ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

আজ ১৪ ডিসেম্বর। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। বাঙালি জাতির জীবনে একটি কলঙ্কের দিন। দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের নিধনের মর্মন্তুদ স্মৃতিঘেরা বেদনাবিধুর দিন আজ। বাঙালির মেধা-মনন-মনীষা শক্তি হারানোর দিন আজ। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ৯ মাস রক্তগঙ্গা পেরিয়ে গোটা জাতি যখন উদয়ের পথে দাঁড়িয়ে, ঠিক সেই সময়ই রাতের আঁধারে পরাজয়ের গ্লানিমাখা পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর, আল শামস ও শান্তি কমিটির সদস্যরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের বেছে বেছে হত্যা করে। বিজয়ের মাত্র দুইদিন আগে এই দিনে দেশকে মেধাশূন্য করার পূর্বপরিকল্পনা নিয়ে ঘর থেকে তুলে নিয়ে রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় বাঙালি জাতির সেরা শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিত্সক, প্রকৌশলী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীসহ দেশের বরেণ্য কৃতী সন্তানদের।

১৯৭১ সালে দীর্ঘ নয় মাস মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পৃথিবীর বুকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে এসব বুদ্ধিজীবী নিজেদের মেধা, মনন ও লেখনীর মাধ্যমে স্বাধীনতার সংগঠকদের প্রেরণা জুগিয়েছেন। পথ দেখিয়েছেন মুক্তির। উদ্দীপ্ত করেছেন অধিকার আদায়ে। আর সেটিই কাল হয়ে দাঁড়ায় তাদের জন্য। সপ্তাহজুড়ে এ দেশীয় নরঘাতকদের করা তালিকায় একে একে উঠে এলো অসংখ্য বুদ্ধিদীপ্ত সাহসী মানুষের নাম। বুদ্ধিজীবীদের তালিকা তুলে দেয় তত্কালীন জামায়াতে ইসলামীর সশস্ত্র ক্যাডার গ্রুপ কুখ্যাত আলবদর ও আল শামস বাহিনীর হাতে। পেছন থেকে মদদ জোগায় পূর্ব পাকিস্তানের দায়িত্বে থাকা পাক জেনারেল রাও ফরমান আলী। ডিসেম্বরের ১০ থেকে ১৪ তারিখ পর্যন্ত সে তালিকা ধরে বুদ্ধিজীবী হত্যার ঘৃণ্যতম অপকর্মটি করে এই ঘাতক চক্র।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী

এ দিকে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে রাষ্ট্রপতি বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগের পথ বেয়ে দেশকে জ্ঞানভিত্তিক, প্রজ্ঞাময় সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলায় পরিণত করতে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান। রাষ্ট্রপতি বিজয়ের প্রাক্কালে হানদার বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে শাহাদত বরণকারী শহীদ বুদ্ধিজীবীদের গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণীতে দেশের বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, এই কুখ্যাত মানবতা বিরোধীদের যারা রক্ষার চেষ্টা করছে, তাদেরও একদিন বিচার হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা দেশের বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় এনেছি। কোনো ষড়যন্ত্রই জাতিকে এ পথ থেকে বিচ্যুত করতে পারবে না। দল-মত নির্বিশেষে ’৭১-এর ঘাতক, মানবতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী জামায়াত চক্রের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৮ সালের শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবসে এটাই হবে আমাদের অঙ্গীকার।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে জেপি’র শ্রদ্ধাঞ্জলি

জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান ও পানি সম্পদ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি এবং সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী শেখ শহীদুল ইসলাম বাংলাদেশের গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করে শহীদ বুদ্দিজীবী দিবস উপলক্ষে এক বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে জেপি নেতৃদ্বয় বলেন, এবারের শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে আমাদের দৃপ্ত শপথ গ্রহণ করতে হবে যাতে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকে এবং এই ধরনের পৈশাচিক হত্যাকাণ্ডের বিচার সু-সম্পন্ন হয়। এদিকে যথাযোগ্য ও শোকের আবহে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালনে দেশব্যাপী বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

আজ ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী ও ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতীয় পার্টি-জেপি তিনদিনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর লালমাটিয়ায় জেপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দলের সম্পাদক মন্ডলীর যৌথ সভায় এই কর্মসূচি গৃহীত হয়।

কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- ১৪ ডিসেম্বর সকাল ৬টায় জেপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দলের সকল কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ, সকাল সাড়ে ৭টায় মিরপুরে জাতীয় বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে এবং সকাল সাড়ে ৮টায় রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে পুষ্পার্ঘ অর্পণ ও শ্রদ্ধা নিবেদন। ১৬ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৬টায় জেপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দলের সকল কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ৮টায় সাভারে জাতীয় স্মৃতি সৌধে পুষ্পার্ঘ অর্পণ ও মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন। এ ছাড়া ১৭ ডিসেম্বর বিকাল ৩টায় লালমাটিয়ায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা। জেপি’র সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী শেখ শহীদুল ইসলাম দলের সকল শাখাকে কেন্দ্রের অনুরূপ কর্মসূচি গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করেছেন।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ